শিরোনাম

Space for ads

কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট, বিকল এক্সরে মেশিন

 প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৪ অপরাহ্ন   |   চিকিৎসা

কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট, বিকল এক্সরে মেশিন
Space for ads

মৌলভীবাজার জেলার চা বাগান অধ্যুষিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চা বাগান এলাকার সরকারি এ হাসপাতালের ওপর নিম্ন-আয়ের মানুষের আশা আর নির্ভরতা অনেক বেশি।
কিন্তু এসবের কোনো বালাই নেই এখানে। নানান সমস্যায় জর্জরিত এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

৩১ শয্যা থেকে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে চিকিৎসক সংকট। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। আট কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি ভবন নির্মাণ হলেও হাসপাতাল চালানোর মতো লোকবল ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ তৈরি হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। ২০১৩ সালে ডিজিটাল এক্সরে ও ২০১৪ সালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি চালু হলেও বর্তমানে দুটি সেবাই বন্ধ রয়েছে। ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। অপারেটর না থাকায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনটি পড়ে আছে অনেক দিন। ল্যাবের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও সীমিত। প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হয় রোগীদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১০ মার্চ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে সে অনুপাতে লোকবল বাড়েনি। ৩১ শয্যার যে লোকবল থাকার কথা সেটিও নেই। চিকিৎসক, নার্স তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট রয়েছে। মেডিকেল অফিসারের দুটি পদই শূন্য। উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ও হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। মেডিসিন, অ্যানেস্থেসিয়া, সার্জারি ও গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদের সবকটি খালি রয়েছে। শুধু দন্ত চিকিৎসক রয়েছেন। ২৫ জন নার্সের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২২ জন।

রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালে গাইনি, সার্জারি ও অ্যানেস্থেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে সেবাগ্রহীতারা বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসাসেবাও নেই বললেই চলে। বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক না থাকায় যেকোনো রোগীর জন্য কর্মরত মেডিকেল অফিসারই একমাত্র ভরসা। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে চা-শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের। তবে শিশুদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।

চিকিৎসকরা জানান, প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে সেবা নেওয়া রোগীর সংখ্যা ২০০ থেকে ২৫০ জন। আন্তঃবিভাগে ভর্তি থাকে ৩০-৪০ জন। জরুরি বিভাগে সেবা নেওয়া রোগীর সংখ্যা অর্ধশতাধিক। সব মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৩৫০ রোগী সেবা নিতে আসে। তাদের মধ্যে অনেকের এক্সরে করার প্রয়োজন হয়। তবে ব্যবস্থা না থাকায় জেলা সদর কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে প্রয়োজনীয় এক্সরে সেবা নিতে হয়। এতে মানুষের অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হচ্ছে।

সেবা নিতে আসা আবুল মিয়া বলেন, ‘এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি সেবা চালু না থাকায় বাধ্য হয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় এক্সরে করাতে হয়। এতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। ’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া  বলেন, হাসপাতালে শয্যা বেড়েছে, তবে প্রয়োজনীয় জনবল এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। চিকিৎসক সংকট প্রকট। তবে প্রয়োজনীয় ওষুধ রয়েছে। এক্সরে মেশিন মেরামত করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার জন্য সনোগ্রাফার বা রেডিওলজিস্ট অপারেটর দরকার। সে বিষয়টিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। লোকবল পেলে সেটি চালু হবে। যেসব রোগীকে সেবার আওতায় আনা যায় না, তাদের রেফার করা হচ্ছে। জরুরি যে সাপোর্ট আছে, তা দিয়ে যাদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, শুধু তাদেরই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান  বলেন, মৌলভীবাজারের প্রায় সব হাসপাতালে লোকবল সংকট রয়েছে। লোকবল বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতির বিষয়টিও কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।

BBS cable ad