শিরোনাম

Space for ads

মমেক হাসপাতাল: বাড়তি টাকা নিচ্ছে কর্মচারী, চুপ কর্তৃপক্ষ

 প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৮ অপরাহ্ন   |   মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

মমেক হাসপাতাল: বাড়তি টাকা নিচ্ছে কর্মচারী, চুপ কর্তৃপক্ষ
Space for ads

হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসার পর ট্রলিতে উঠানো থেকেই শুরু হয় হয়রানি ও অনিয়ম। অতিরিক্ত টাকায় ট্রলি দিয়ে রোগীদের নিয়ে যেতে হয়। বেড পাওয়াসহ সবক্ষেত্রে আয়া, ওয়ার্ডবয়, ক্লিনারসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের টাকা দিতে হয়। এছাড়া আউটডোরে লম্বা লাইন থাকলেও বাড়তি টাকা দিলে লাইন ছাড়াই পাওয়া যায় টিকিট। ১০ টাকার এই টিকেটের জন্য গুনতে হয় কমপক্ষে ১০০ টাকা।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের চিত্র এটি। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে নানা অনিয়ম হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হচ্ছে না। কর্মচারীদের বাড়তি টাকা না দিলে আচরণ খারাপ করাসহ যথাযথ সেবা দিচ্ছে না এমন অভিযোগ দিলেও আমলে নেয়া হয় না। এসব অসাধু কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় না। ফলে এই হাসপাতালে অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এক হাজার শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন তিনগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকছেন। এর বাইরে আউটডোরে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন তিন থেকে চার হাজার রোগী। হাসপাতালের ৩৭টি ওয়ার্ডের বিপরীতে প্রতিদিন তিন শিফটে ৪১০ জন ডাক্তার এবং ১ হাজার ৭২ জন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলা ছাড়াও সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নরসিংদী এবং গাজীপুর জেলার রোগীরা এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালে আসা রোগীদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। কর্মচারীদের অনিয়ম ধরা পড়লে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, ওয়ার্ডগুলোর মেঝে এবং বারান্দাতে ঠাসাঠাসি করে থাকতে হচ্ছে বহু রোগীদের। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ নারী-পুরুষসহ শিশুরা। হাসপাতালের আউটডোরেও একই অবস্থা। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হচ্ছে। তবে অনেকে লাইন ছাড়াই টিকিট নিতে অসাধু কর্মচারীদের টিকিটের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমপক্ষে দশগুণ বেশি দিয়ে চিকিৎসকের কক্ষে গিয়ে সেবা নিচ্ছেন। এছাড়াও হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময়ও রোগীদের দীর্ঘ লাইনে দাড়াতে দেখা গেছে। দালাল ধরে গেলে সিরিয়াল ছাড়াই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাসহ দ্রুত রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে।

সদর উপজেলার লক্ষীপুর এলাকার মনির নামের এক যুবক বলেন, সম্প্রতি হঠাৎ করে ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। এক সপ্তাহ অতিবাহিত হাওয়ার পরও ভালো না হওয়ায় বড় ভাইকে নিয়ে হাসপাতালের আউটডোরে যাই। লম্বা লাইন দেখতে পেয়ে এক কর্মচারীকে সরকার নির্ধারিত ১০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা দিয়ে লাইন ছাড়াই টিকিট কেটে ডাক্তার দেখিয়েছি।

বাড়তি টাকা দেয়া ঠিক হলো কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অনেকে অসাধু কর্মচারী কিংবা দালালদের সঙ্গে আস্তে আস্তে কথা বলে বাড়তি টাকা দিয়ে সুবিধা নেয়। তাই আমিও দিয়েছি।

আকাশ নামের একজন বলেন, সম্প্রতি আমার মাকে কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করেছিলাম। ওই ওয়ার্ডে রনি ও এমদাদ নামের দুই কর্মচারীকে টাকা দিয়ে খুশি রাখতে হয়। টাকা না দিলে ভেতরে গিয়ে মাকে দেখতে দেয়া হয় না। এমতাবস্থায় বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়েছে। মায়ের ছুটি হওয়ার পর হাসপাতালের উপপরিচালকসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে জানানো হলে তদন্তে প্রমাণ মিললে চাকুরিচ্যুত করা হবে জানানো হয়। কিন্তু পরে আর তদন্তও করা হয়নি, চাকুরিচ্যতও করা হয়নি। ফলে এদের মতো অসাধু কর্মচারিরা রোগীদের যথাযথ সেবা না দিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করতে ব্যস্ত।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগরের সভাপতি আলী ইউসুফ বলেন, ট্রলিতে রোগী আনা-নেয়া, সিট পাওয়া, লাইনে না দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ এবং বিভিন্ন টেস্ট দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার ক্ষেত্রে রোগীদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালের অসাধু কর্মচারিরা এই অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি বাড়তি সুবিধা আদায়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের ইচ্ছাও দুর্নীতিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত, রোগীদের ভোগান্তি কমানোর দিকে মনোযোগী হওয়া।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসকদের চেষ্টার কমতি নেই। হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে কর্মচারীরা অতিরিক্ত টাকা আদায় করাসহ যথাযথ সেবা না দেওয়ার অভিযোগ আসলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তবে রোগী ও তাদের স্বজনদেরও উচিত, সচেতন থাকা।

BBS cable ad

মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এর আরও খবর: