রমেকের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালজুড়ে নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা-আর্বজনা। রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ড বয়রা। শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় তাদের রাখা হচ্ছে বারান্দা আর মেঝেতে। এই অবস্থায় রোগীদের বাড়িতে থেকে চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছেন সেখানকার চিকিৎসকরা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন রংপুর কালের কণ্ঠ ও দেশ টিভির ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলাম। তার ডান পা ভেঙে গেলে তাকে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রফিক জানান, রাতে হাসপাতালে তার পায়ের প্লাস্টার করার পর চিকিৎসক তাকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসার পরামর্শ দেন।
কী কারণে তাকে বাড়িতে বসে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক জানতে চাইলে রফিক জানান, হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে দুর্গন্ধে থাকা যায় না। সর্বত্র নোংরা পরিবেশ। টয়লেটগুলো পরিষ্কার নেই। সময়মতো চিকিৎসক আসে না। নানান কারণে তাকে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থাকলেও নেই ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ড। সেখানে দায়িত্বরত নার্স ও ব্রাদারেরা রোগীদের ভর্তির কাগজ দেখে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছরেও হাসপাতালটিতে সচল করা সম্ভব হয়নি গুরুত্বপূর্ণ এই ওয়ার্ড। ফলে দ্রুত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। এছাড়াও বরাদ্দের ওষুধ না পাওয়া, দালালের দৌরাত্ম, টাকা ছাড়া সেবা না পাওয়াসহ রয়েছে শত শত অভিযোগ।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ট্রলি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চুক্তিভিক্তিক কর্মচারীরা রোগীদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পৌঁছে দিতে হাতিয়ে নেন দুই থেকে তিন শত টাকা। টাকা না দিলে রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ থেকে শুরু করে হাতাহাতির ঘটনা পর্যন্ত ঘটে থাকে।
হাসপাতালটির সবচেয়ে জটিল রোগীরা চিকিৎসা সেবা নেন হৃদরোগ বিভাগে। সেখানে এসি থাকলেও বিকল, ফলে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগ চরমে উঠে রোগীদের। এছাড়াও নার্সদের অসদাচরণ, টাকা ছাড়া সেবা না পাওয়াসহ রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ।
হাসপাতালটির চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটা অচল অবস্থা বিরাজ করছে। জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব দেখা দিয়েছে। কবে নাগাদ এই সংকট সমাধান হবে তা কেউ জানে না।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, জনবল সংকটের কথা জানিয়ে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। হাসপাতালে যেসব সমস্যা রয়েছে, তা নিরসনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি চলতি মাসেই সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।