শিরোনাম

Space for ads

দুই চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল

 প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন   |   চিকিৎসা

দুই চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল
Space for ads

চা বাগান অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় আড়াই লাখের বেশি মানুষের বসবাস। প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীর সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি ভবন নির্মাণ হলেও হাসপাতাল চালানোর মতো লোকবল ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ তৈরি হয়নি। ৩১ শয্যা থেকে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও চিকিৎসক রয়েছেন দুজন। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।

স্থানীয়রা বলছেন, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। ২০১৩ সালে ডিজিটাল এক্স-রে ও ২০১৪ সালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি চালু হলেও বর্তমানে দুটি সেবাই বন্ধ রয়েছে। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। অপারেটর না থাকায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনটি পড়ে আছে অনেক দিন। ল্যাবের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও সীমিত। প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হয় রোগীদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১০ মার্চ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে সে অনুপাতে লোকবল বাড়েনি। ৩১ শয্যার যে লোকবল থাকার কথা সেটিও নেই। চিকিৎসক, নার্স তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সংকট রয়েছে। মেডিকেল অফিসারের দুটি পদই শূন্য। উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ও হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। মেডিসিন, অ্যানেস্থেসিয়া, সার্জারি ও গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদের সবক’টি খালি রয়েছে। শুধু দন্ত চিকিৎসক রয়েছেন। ২৫ জন নার্সের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২২ জন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এক্স-রে মেশিন মেরামত করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার জন্য সনোগ্রাফার বা রেডিওলজিস্ট অপারেটর দরকার। সে বিষয়টিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। লোকবল পেলে সেটি চালু হবে। যেসব রোগীকে সেবার আওতায় আনা যায় না, তাদের রেফার করা হচ্ছে। জরুরি যে সাপোর্ট আছে, তা দিয়ে যাদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব, শুধু তাদেরই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘হাসপাতালে শয্যা বেড়েছে, তবে প্রয়োজনীয় জনবল এখনো নিয়োগ দেয়া হয়নি। চিকিৎসক সংকট প্রকট। তবে প্রয়োজনীয় ওষুধ রয়েছে।’

রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালে গাইনি, সার্জারি ও অ্যানেস্থেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে সেবাগ্রহীতারা বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসাসেবাও নেই বললেই চলে। বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক না থাকায় যেকোনো রোগীর জন্য কর্মরত মেডিকেল অফিসারই একমাত্র ভরসা। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে চা-শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের। তবে শিশুদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।

চিকিৎসকরা জানান, প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে সেবা নেয়া রোগীর সংখ্যা ২০০-২৫০। আন্তঃবিভাগে ভর্তি থাকে ৩০-৪০ জন। জরুরি বিভাগে সেবা নেয়া রোগীর সংখ্যা অর্ধশতাধিক। সব মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৩৫০ রোগী সেবা নিতে আসে। তাদের মধ্যে অনেকের এক্স-রে করার প্রয়োজন হয়। তবে ব্যবস্থা না থাকায় জেলা সদর কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে প্রয়োজনীয় এক্স-রে সেবা নিতে হয়। এতে মানুষের অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হচ্ছে।

সেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে সেবা নিতে আসে। উপজেলার ইসলামপুর, আদমপুর, মাধবপুরসহ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা বেশি আসেন এখানে।

সেবা নিতে আসা আবুল মিয়া বলেন, ‘এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি সেবা চালু না থাকায় বাধ্য হয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় এক্স-রে করাতে হয়। এতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে।’

সার্বিক বিষয়ে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মৌলভীবাজারের প্রায় সব হাসপাতালে লোকবল সংকট রয়েছে। তবে কমলগঞ্জ ও জুড়ী উপজেলায় সংকট বেশি। লোকবল বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতির বিষয়টিও কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’

BBS cable ad