প্রয়োজনীয় জনবলের অর্ধেকও নেই কুড়িগ্রাম ২৫০ শয্যা হাসপাতালে

ব্রহ্মপুত্র নদের কোলঘেঁষা উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম। অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা এ জেলার সরকারি স্বাস্থ্যসেবারও বেহাল দশা। এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর উন্নত চিকিৎসার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। তবে সেখানেও রয়েছে চিকিৎসক এবং ওষুধ সংকট। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও জনবল কাঠামো ১০০ শয্যারও অর্ধেক। প্রয়োজন অনুপাতে মিলছে না ওষুধ। এতে স্বাস্থ্যসেবাবঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলা ও বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালই এ জেলার বাসিন্দাদের ভরসা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শহরের হাটিরপাড়ে ১৯৬৮ সালে ৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে এটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০১৭ সালে এটিকে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়। ২৫০ শয্যায় হাসপাতালের জন্য ১৭৭ জন চিকিৎসক প্রয়োজন হয়। কিন্তু জনবল কাঠামোর এখনো অনুমোদন পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। সেখানেও রয়েছে জনবল সংকট। ১০০ শয্যার জন্য চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৪৩টি। তবে বর্তমানে চিকিৎসক রয়েছেন ২০ জন। এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণীর নার্স ও অন্যান্য ১৬৯টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১৪৯ জন। তৃতীয় শ্রেণীর মঞ্জুরীকৃত ৫২ পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১৬ জন এবং চতুর্থ শ্রেণীর মঞ্জুরীকৃত ২৮টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১০ জন। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪০০ ভর্তি রোগীর পাশাপাশি বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্য প্রায় আড়াই হাজার।
রোগীরা বলছেন, চিকিৎসা নিতে এলে ভোগান্তির অন্ত থাকে না কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। মিলছে না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা। পাওয়া যায় না প্রয়োজনীয় ওষুধ। হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও জনবল রয়েছে ১০০ শয্যার অর্ধেক। জেলার চরাঞ্চলের রোগীদের হাসপাতালে সেবা নিতে এসে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়। চরাঞ্চল বা প্রত্যন্ত এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ টাকা ও সময় ব্যয় করে হাসপাতালে এলেও প্রয়োজন অনুপাতে চিকিৎসা ও ওষুধ মিলছে না। ফলে চরাঞ্চলের মানুষ ভোগান্তি আর হয়রানি থেকে বাঁচতে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেয়।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের সবুজপাড়া গ্রামের মাইদুল ইসলাম। তিনি জানান, এখানে দিনে-রাতে মিলে মাত্র একবার ডাক্তার আসেন। হাসপাতালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়। ওষুধও পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ ওষুধ বাইরে থেকে আনতে হয়।’
সরজমিন দেখা গেছে, চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পেতে বহির্বিভাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে রোগীদের। আবার রোগের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না সরকারি ওষুধ। হাসপাতালের নতুন ভবনে দুটি লিফট লাগানো থাকলেও বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকছে।
হাসপাতালসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুড়িগ্রাম জেলার প্রায় ২৩ লাখ মানুষের উন্নত চিকিৎসাসেবার জন্য ২০১৭ সালে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর ২০২৩ সালে উদ্বোধন করা হয় আট তলা বিশিষ্ট নতুন আধুনিক ভবন। তবে নিয়োগ করা হয়নি জনবল। হাসপাতালটিতে ১০০ শয্যার জনবলের অর্ধেক চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।