Space for ads

উন্নত চিকিৎসার জন্য চার দেশে যাচ্ছেন আরো ২৬ জন

 প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন   |   চিকিৎসা

উন্নত চিকিৎসার জন্য চার দেশে যাচ্ছেন আরো ২৬ জন
Space for ads

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার যুবক আনোয়ার হোসেন। রাজধানীর সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। বসবাস গুলশানের শাহজাদপুর এলাকায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। গত ১৯ জুলাই পুলিশের গুলি আনোয়ারের বুকের বাম দিক ভেদ করে ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। তারপর থেকে প্রায় ছয় মাস ধরে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু শারীরিক অবস্থার খুব উন্নতি হয়নি। গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেলের বিশেষ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় বুকের পাশে ১১ দিন বয়সী নবজাতক সন্তানকে নিয়ে তিনি শুয়ে আছেন। কিন্তু সন্তানকে কোলে নিয়ে বসা বা দাঁড়ানোর সক্ষমতা তার নেই। ঘাঁড় ঘুরিয়ে প্রথম সন্তানের মুখটি একবারের জন্য দেখার সক্ষমতাও তার নেই।

শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে কাতর কণ্ঠে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘এত এত রক্ত আর মানুষের লাশ দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। সবাইকে ডেকে এনে আন্দোলন শুরু করি। পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। আমি ছিলাম সবার সামনে। হঠাৎ একটি গুলি এসে বুকে লাগে। প্রথমে বুঝতে পারিনি। সবাই ধরাধরি করে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তারপর বুক থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত অবশ। বসতে পারি না। দাঁড়াতে পারি না। পা নাড়াতে পারি না। সব সময় শুয়ে থাকতে হয়।’

উন্নত চিকিৎসার জন্য আনোয়ারকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের নিয়ে করা বিশেষ সেলের সভাপতি ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘শুধু আনোয়ার হোসেন নয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া এ রকম আরো ছয়জনের বিদেশে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। এদের মধ্যে মোশাররফ নামের একজন আহতকে থাইল্যান্ড পাঠানো হয়েছে। দীপঙ্কর বালার তুরস্কের ভিসা হয়েছে, তিনি দ্রুতই যাবেন। রাজিব মিয়া, হাফিজুর রহমান ও মিজানুর রহমান নামের আরো তিনজনকে বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন। তাদের বিদেশ গমন প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়েছে, কিন্তু গন্তব্য ঠিক হয়নি।’

দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসারত এ রকম প্রায় অর্ধশতজনের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন বলে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আজ (গতকাল) পর্যন্ত ২২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে চোখের চিকিৎসা নিয়ে দুজন ফিরে এসেছেন। আগামীতে আরো ২৬ জনকে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এদের মধ্যে অনেকে ভিসা পেয়েছেন, অনেকের পাসপোর্ট হয়েছে। অচিরেই তাদের ফ্লাইট। আহতদের তুরস্ক, রাশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর—এ চার দেশে পাঠানো হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) থেকে ছয়জনকে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে একজনকে পাঠানো হয়েছে, আরো ১১ জনকে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ডিএমসি) থেকে এরই মধ্যে দুজনকে পাঠানো হয়েছে, আরো চারজনকে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে গতকাল সাতজনসহ মোট আটজনকে পাঠানো হয়েছে, আরো তিনজনকে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল থেকে দুজনকে পাঠানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুজনকে পাঠানো হয়েছে, আরো দুজনকে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সব মিলিয়ে শিগগিরই ২৬ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো হবে।

নিটোর থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে শহিদুল, হেদায়েতুল্লাহ, মোস্তফা কামাল নুর, দুলাল হোসেন, রায়হান ও দুলাল খানকে। সবাইকে প্রাথমিকভাবে থাইল্যান্ডে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাতজনের চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছে, যাদের সবাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে চোখে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী।

BBS cable ad

চিকিৎসা এর আরও খবর: