ডায়রিয়া-নিউমোনিয়ায় হাসপাতালে রোগীর ভিড়
শীতে শিশুদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। রাজধানীর মহাখালী আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে প্রতিদিন ডায়রিয়া নিয়ে গড়ে ৬৫০-৭০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। ডায়রিয়ার পাশাপাশি শিশুদের নিউমোনিয়াও বেড়েছে। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া থেকে সুরক্ষিত রাখতে শিশুদের ঠান্ডা না লাগানো, বুকের দুধ খাওয়ানো ও ডায়রিয়া হলে সঠিক নিয়মে স্যালাইন খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গতকাল দুপুরে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মূল ভবনের সামনে তিনটি বুথে নার্সরা রোগী ভর্তি নিচ্ছেন এবং চিকিৎসকরা রোগীদের দেখভাল করছেন। বুথের সামনে শিশুকে কোলে নিয়ে অপেক্ষারত মায়েদের দীর্ঘ লাইন।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কথা হয় সদরঘাট থেকে আসা এক বছর এক মাস বয়সী শিশু হাসানের মা সাঈদা বেগমের সঙ্গে। পাঁচ দিন ধরে বমি ও পাতলা পায়খানা হাসানের। স্যালাইন খাওয়ানোর পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গতকাল সকালে আইসিডিডিআরবিতে আনা হয়েছে তাকে। আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শীতে ২০ শতাংশ বেশি রোগী আসছে বলে জানা গেছে। আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ডায়রিয়া রোগীদের ৮০ শতাংশের বয়স দুই বছরের কম।
আইসিডিডিআরবি ঢাকা হাসপাতালের এসএসইউ ওয়ার্ডের ক্লিনিক্যাল লিড ডা. শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, প্রতিবছর শীতের শুরুতে দেশে ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। যদিও বিগত দুই বছরের তুলনায় এ বছর রোগী কিছুটা বেশি। গত তিন সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮৫০-৯০০ রোগী হাসপাতালে আসছে। ঢাকা শহর ও ঢাকার বাইরে থেকেও রোগী আসছে। রোটা ভাইরাস দিয়ে এই ডায়রিয়াটা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ ডায়রিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই সমস্যা হয় বেশি। এই ডায়রিয়া থেকে সুস্থ হতে ৫-৭ দিন সময় লাগে। স্যালাইন একটা ওষুধ, এটা কোনো সাধারণ খাবার নয়। স্যালাইন বানাতে হবে সঠিকভাবে। পাতলা পায়খানা হলে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পরে বাচ্চার ওজন যত কেজি, তত চামচ স্যালাইন পানি খাওয়াতে হবে। ৫ এমএলের চামচে মেপে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। চিকিৎসকরা বলেন, যদি দেখা যায় শিশু দুর্বল হয়ে নেতিয়ে পড়েছে, খেতে পারছে না কিংবা শিশুর পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে, তীব্র জ্বর, পায়খানায় রক্ত আসছে বা খিচুনি হচ্ছে তখন শিশুকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। ডায়রিয়ার পাশাপাশি বাড়ছে নিউমোনিয়া রোগীও। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে ভর্তি আছে ৩১ জন। জানুয়ারি মাসে এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে নিউমোনিয়ায়জনিত কারণে মারা গেছে দুই শিশু। শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. মাহবুবুল হক বলেন, শীতে শিশুরা নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৯০০ জনের মধ্যে ২০০ জনই ঠান্ডাজনিত এসব রোগে ভুগছে। এর মধ্যে ৩০ জনের মতো শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শীতের মৌসুমে শিশুদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, শিশুদের অপ্রয়োজনে বাইরে নিয়ে ঘোরাঘুরি করার দরকার নেই। খুব প্রয়োজনে বের হলে গরম কাপড়ে মাথা, কান, হাত ঢেকে রাখতে হবে, পায়ে মোজা পরিয়ে রাখতে হবে।