Space for ads

হাসপাতাল যেন এক ভূতুড়ে বাড়ি!

 প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন   |   চিকিৎসা

হাসপাতাল যেন এক ভূতুড়ে বাড়ি!
Space for ads
 ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা ২০ শয্যাবিশিষ্ট সৌদি হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় আলো ছড়াতে পারেনি। ফলে চিকিৎসা বঞ্চিত দক্ষিণ আইচা থানা এলাকার ৪টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে কোনো কার্যক্রম না চলায় এখন এটি ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত।

জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে সৌদি সরকারের আর্থিক সহায়তায় দক্ষিণ আইচা থানা এলাকার লক্ষাধিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি চারতলা ভবন ও চারটি কোয়ার্টারসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে, ইসিজি, ডেন্টাল ইউনিট, অ্যাম্বুলেন্স, অপারেশন থিয়েটার এবং ৪ জন ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ২০ শয্যা সৌদি হাসপাতালটির। কিছুদিন স্বাস্থ্যসেবা চলার পর বন্ধ হয়ে যায় কার্যক্রম। চাকরি রাজস্ব খাতে হস্তান্তরসহ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে অনুমোদন না মেলায় হাসপাতালটিতে কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অনেকে চাকরি ছেড়ে দেন।

বতর্মানে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে হাসপাতালটির বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ চালু করা যাচ্ছে না। যার জন্য হাসপাতালটির কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। হাসপাতালটিতে চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৩২টি পদ রয়েছে। তার মধ্যে ২৩টি পদই শূন্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটির সীমানা প্রাচীরের গ্রিল ও মূল ভবনের ভেতরে বিভিন্ন কক্ষের দরজা-জানালার গ্লাস ভাঙা। দোতলায় বাথরুমের বেসিন এবং কমোড ভেঙে পড়ে আছে। পরিত্যক্ত কক্ষগুলো ময়লা-আবর্জনার স্তুপে পরিণত। তিনতলায় গেট বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। রুমে ও ছাদে সিগারেটের টুকরা পড়ে থাকতেও দেখা যায়। হাসপাতালের আবাসিক ভবনগুলো এখন পুরোপুরিভাবে ব্যবহারের অযোগ্য। বর্তমানে হাসপাতাল ভবনের নিচতলা এবং আবাসিক ভবনগুলো মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালটির চারদিকের খালি জায়গাতে ঝোঁপঝাড়ে ভরে গেছে। এখন এ যেন এক ভূতুড়ে বাড়ি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. হুমায়ুন কবির হাসপাতালে কর্মরত থাকার কথা থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে আসছেন না। লালমোহনে গড়ে তুলেছেন বিশাল এক ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেখানেই রোগী দেখেন তিনি। এছাড়া মেডিকেল অফিসার ডা. তালহা সামিউল হককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে তিনি রোগী দেখেন দক্ষিণ আইচার একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। বর্তমানে একমাত্র অফিস সহকারী হাবিবুল হক পুরো হাসপাতালটি দেখভাল করছেন। বাকি কর্মচারীরা হাসপাতালে কর্মরত থাকার কথা থাকলেও হাসপাতালে উপস্থিত না থেকে তারা নিজেরা বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন।

হাসপাতালের অফিস সহকারী হাবিবুল হক হাবিব জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে এ অঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বহির্বিভাগে দৈনিক ৪ থেকে ৫ জন রোগী আসেন। তবে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। তবে হাসপাতালটির বেহাল অবস্থার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

দক্ষিণ আইচা বাজারের আছমা ট্রেডার্স নামের একটি ব্যাটারির দোকানের মালিক আব্দুর রহিম বলেন, হাসপাতালের গেট খোলা থাকায় মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। আবাসিক ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। যেখানে ডাক্তার ও নার্স থাকার কথা, সেখানে থাকে গরু-ছাগল। হাসপাতালটি এখন একটি ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। আমার দাবি; এখানকার সমস্যা সমাধান করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন হাসপাতালটি দ্রুত চালুর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক হাছনাইন, মিজান মীর ও ব্যবসায়ী জুলফিকার তালুকদারসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, এই এলাকার মানুষজন অসুস্থ হলে প্রায় ২৫-২৬ কিলোমিটার দূরে চরফ্যাশন উপজেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়।হাসপাতালটি চালু থাকলে এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। হাসপাতালটি পুনরায় চালু করে উপকূলীয় এই এলাকার অবহেলিত লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য আমরা বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

দক্ষিণ আইচা ২০ শয্যাবিশিষ্ট সৌদি হাসপাতালের এমন পরিস্থিতির ব্যাপারে জানতে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. হুমায়ুন কবিরকে ফোন দেওয়া হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই কোনো সদুত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।

তবে এ বিষয়ে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. কেএম শফিকুজ্জামান বলেন, ওই হাসপাতালটির চিকিৎসকসহ জনবল সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে জানাব। আশা করছি এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ হাসপাতালটির কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
BBS cable ad

চিকিৎসা এর আরও খবর: