জনবল-চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত সেবা
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও এখনো প্রশাসনিক অনুমোদন পায়নি। কটিয়াদী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের চার লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ভরসা একটি ৫০ শয্যার উপজেলা হাসপাতাল, চারটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৪১টি কমিউনিটি ক্লিনিক। সবমিলিয়ে উপজেলায় চিকিৎসাসেবার জন্য ৩১ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও ১৪টি পদই শূন্য রয়েছে। ১৭ জন চিকিৎসকের পোস্টিং থাকলেও পাঁচজন চিকিৎসক ডেপুটেশনে রাজধানী ঢাকা কিংবা তাদের সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন। মাতৃত্ব ছুটিতে আছেন একজন।
জানা যায়, শুধু বেতন ভাতার সময় কটিয়াদীতে আসেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এ অবস্থা। ফলে উপজেলার সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসার প্রয়োজনে তারা ছুটে যাচ্ছেন জেলা শহর কিংবা বিভিন্ন জায়গার প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে।
এদিকে, হাসপাতালে উন্নত যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ অপারেশন থিয়েটার থাকলেও অ্যানেস্থেসিয়া ও সার্জারি বিশেষজ্ঞ না থাকায় বছরের পর বছর ধরে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না অপারেশন থিয়েটার। ফলে সরকারের অর্ধ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কোনো কাজে আসছে না। বরং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আছে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, নেই রেডিওলোজিস্ট। ফলে তালাবদ্ধ রুমে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
প্যাথলজি বিভাগ আছে ,নেই টেকনোলজিস্ট। ফলে রক্ত ও মলমূত্র পরীক্ষা করতে রোগীদের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয়। আছে শিশু, মেডিসিন, গাইনী ও সার্জারিসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ। নেই শুধু কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ফলে কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উপজেলার চারটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র চিকিৎসক শূন্য অবস্থায় রয়েছে। কমিউনিটি কিনিকগুলো বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। ৫০ শয্যার উপজেলা হাসপাতালে রয়েছেন একজন আবাসিক ও চারজন মেডিকেল অফিসার, দুইজন কনসালটেন্ট ও একজন ইউনানী চিকিৎসক।
এই আটজনকে দিয়ে চলছে উপজেলাবাসীর চিকিৎসাসেবা। মাতৃত্ব ছুটিতে আছেন একজন। তাদের বাইরে ডেপুটেশনে রাজধানীর কুর্মিটোলা ৫০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে একজন, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালে একজন, সিলেট এমজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একজন, কিশোরগঞ্জে সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দুজন।
এ সময় কথা হয় হাসপাতালে সেবা নিতে আসা কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর চরপুক্ষিয়া গ্রামের কুলছুম (৩৫), করগাঁও লাহৌন গ্রামের আয়েশা (৬০), মসূয়া কাজীরচর গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনসহ আরো অনেকের সঙ্গে।
তারা জানান, হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ কোনো ডাক্তার না থাকায় তাদের জেলা সদরে যেতে হয়। বিশেষ করে প্রসূতিদের জটিল প্রসব ও সিজারিয়ান সেবা নিতে যেতে হয় ৩০ কিমি দূরে কিশোরগঞ্জে, না হয় বেসরকারি ক্লিনিকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি জুনিয়ার কনসালটেন্ট পদ দীর্ঘদিন থেকেই শূন্য রয়েছে। এছাড়া টেকনোলজিস্টসহ বিভিন্ন সহায়ক জনশক্তির ৭৩টি পদ শূন্য আছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ঈশা খান বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ শূন্য পদ পূরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। তবে আমাদের যেটুকু রয়েছে সেটুকু দিয়েই সাধ্যমত সেবাদান করে যাচ্ছি।