সরকারি হাসপাতালের ওটি বয় যখন চিকিৎসক
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওটি মো. আলমগীর হোসেন। ২০১১ সালে ওই হাসপাতালে যোগদান করলেও তদবির করে প্রেষণে চলে আসেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে। বিগত ১৪ বছর তিনি এই হাসপাতালে চাকরি করার পাশাপাশি নিজেকে একজন চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিজ এলাকায় চেম্বার খুলে বসেছেন। গ্রামের সাধারণ মানুষ তার প্রতারণা বুঝতে না পেরে প্রতিদিনই এসে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তবে আলমগীর নামের আগে ডা. লেখা সঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. আলমগীর হোসেন এক সময় প্রবাসে ছিলেন। এরপর দেশে এসে জেলার এক আওয়ামী লীগ নেতার সহযোগিতায় হাসপাতালে চাকরি নেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি পল্লী চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে ডা. পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রামপুর বাজারে চেম্বার দিয়ে বসেছেন। বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে রোগী দেখেন। একই সঙ্গে সুন্নাতে খৎনার কাজও করেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আলমগীর হোসেনের বাবা লোকমান একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। দুই ভাইয়ের মধ্যে আলমগীর বড়। ছোট ভাই হিরন কিছুদিন আগে মালেয়শিয়া গেছেন। তাদের পারিবারিক অবস্থা তেমন ভালো না থাকলেও ডা. পরিচয়ে চেম্বার দিয়ে বেশ টাকা পয়সার মালিক হয়েছেন।
সরেজমিন রামপুর বাজার সংলগ্ন পশ্চিম লাড়ুয়া আলমগীর হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার বাড়ির সামনে লেখা আছে জাহানার মঞ্জিল, মৃধাবাড়ী, প্রযত্নে ডা. মো. আলমগীর হোসেন। বাড়ির পাশেই কবরস্থান। সেখানে লেখা আছে ‘পারিবারিক কবর স্থান। নির্মাণে-ডা. মো. আলমগীর। তবে তার চেম্বারের সামনে কোনো সাইনবোর্ড রাখেননি। অর্থাৎ ডা. পরিচয় তার সব স্থানেই খুব স্বাভাবিকভাবে খোলামেলা তুলে ধরেছেন।
রামপুর বাজারের একজন ওষুধ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি নিজে এই বাজারে গত ৩০ বছর ব্যবসা করলেও অবস্থা আগের মতোই। কিন্তু আলমগীর হোসেন সরকারি হাসপাতালের ডা. পরিচয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। সাধারণ মানুষ বুঝে না বুঝেও তার চিকিৎসা নিতে আসেন। আর সরকারি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও তার এই ভুয়া ডাক্তার পরিচয়ের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
চিকিৎসক না হয়ে কীভাবে পরিচয় দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ভুয়া চিকিৎসক পরিচয়ধারী আলমগীর হোসেন বলেন, এলাকার লোকজনই আমাকে ডা. বলে ডাকে। সে জন্য ডা. লিখি। চিকিৎসক পরিচয় দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। এটি লেখাও ভুল হয়েছে। তবে এখন থেকে আর এই পরিচয় দেব না।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ.কে.এম মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমার হাসপাতাল এরিয়ার মধ্যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিয়ম করলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার রাখি। এমতাবস্থায় যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি তার এলাকায় কী পরিচয় দেন কিংবা কী করেন সে বিষয়ে আমি অবগত নই।
ওটি বয় আলমগীর হোসেনের ডা. পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর ধারা ২৯ এর উপধারা ১ ও ২ অনুযায়ী নিবন্ধিত ব্যাক্তি ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না এবং উল্লেখিত ধারায় কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই ধরনের ভুয়া চিকিৎসক পরিচয় দেওয়ার মানে হচ্ছে ওই ব্যক্তি দেশের আইন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। এই বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তার বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।