Space for ads

নীরবে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু

 প্রকাশ: ২৮ অগাস্ট ২০২৪, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন   |   মহামারি

নীরবে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু
Space for ads

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছে ৭৯ জনের। আর এ বছর মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৭৪৭ জন। অথচ গত বছর এই সময়ে মৃত্যু হয়েছিল মাত্র ১১ জনের। আর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫১১ জন। অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে এ বছর মৃত্যুর সংখ্যা সাতগুণ বেশি। যদিও আক্রান্তের দশগুণ কম।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারি মাস থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত যে ৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে তার মধ্যে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায়। তবে সবচেয়ে বেশি ৪৮ জন ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে। অর্থাৎ ৭১ শতাংশ মৃত্যুই ঘটেছে ঢাকায়। আর ঢাকার দুই সিটিতে এবার মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩৮ জন। আর আক্রান্তের হার হচ্ছে ৩৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন এবং বরিশাল বিভাগে ১০ জন। তবে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন চট্টগ্রামে বিভাগে ৩ হাজার ৩৫১ জন। এ ছাড়াও চলতি বছরের মধ্যে এই মাসেই সবচেয়ে বেশি ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৬৩ জন। এর আগের মাস জুলাইয়ে ১২ জনের মৃত্যু এবং আক্রান্ত হয়েছিল ২ হাজার ৬৬৯ জন। দেখা যাচ্ছে গত মাসের চেয়ে এ মাস শেষ না হলেও মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। অর্থাৎ দিন যতই যাচ্ছে ততই বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, নীরবে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, সামনের দিনগুলো আরও ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে। কারণ দেশজুড়ে কয়েক দিন ধরে কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে বৃষ্টিজনিত জমে থাকা পানি পরিণত হয়েছে এডিসের উর্বর প্রজননক্ষেত্রে। এ ছাড়াও সরকারের পটপরিবর্তনের ফলে সিটি করপোরেশনগুলোতে কাউন্সিলররা আত্মগোপনে থাকায় জোর নেই মশক নিধন কার্যক্রমেও। নিয়মিতভাবে কাজ করছেন না মশক নিধনকর্মীরা। অভিযান পরিচালনা কার্যক্রম থেমে গেছে।

এ ছাড়া লার্ভিসাইড স্প্রে এবং ফগিংসহ সিটি করপোরেশনের নিয়মিত মশাবিরোধী ব্যবস্থাগুলোও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে ডেঙ্গুর মৌসুম হওয়ায় রাজধানীসহ সারা দেশে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। আর ডেঙ্গু এখন কেবল বর্ষাকালীন নয়, বরং সারা বছরের; কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক নয়; পুরো দেশের জন্যই ঝুঁকির কারণ। তাই মশা নিধন না হলে এ থেকে মুক্তি নেই। যার জন্য দেশজুড়ে বছরব্যাপী মশক নিধনের পরিকল্পনা জরুরি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর। যা দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও আক্রান্তের রেকর্ড। যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ হাজার ৫৫ জন, এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ৩৩৯ জন, মৃত্যু তিনজনের, মার্চে আক্রান্ত হন ৩১১ জন, মৃত্যু পাঁচজনের, এপ্রিলে আক্রান্ত ৫০৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে দুজনের, মে মাসে আক্রান্ত ৬৪৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের, জুন মাসে আক্রান্ত হন ৭৯৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে আটজনের আর জুলাই মাসে আক্রান্ত হন ২ হাজার ৬৬৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।

অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি বছর সব মিলিয়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি। এবার নারীদের মৃত্যুর হার ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং পুরুষের হার ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে আক্রান্তের হারে পুরুষ বেশি। এবার পুুরুষের আক্রান্তের হার হচ্ছে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং নারী হচ্ছে ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় মশার ঘনত্ব বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে একজনের। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন ১ হাজার ১৪০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি ৭২৬ জন এবং ঢাকার বাইরে রয়েছেন ৪১৪ জন। এ ছাড়া চলতি বছর রাজধানীর হাসপাতালের মধ্যে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগী ১ হাজার ২১৩ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। এর পরেই রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ২১ জনের মৃত্যু এবং ভর্তি হয়েছেন ৬৫৬ জন। আর ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু চট্টগ্রাম বিভাগে।

BBS cable ad