Space for ads

লোহার খাঁচায় বসে থাকেন চিকিৎসক, বাইরে রোগীরা

 প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ অপরাহ্ন   |   চিকিৎসা

লোহার খাঁচায় বসে থাকেন চিকিৎসক, বাইরে রোগীরা
Space for ads
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের যেখানেই রোগীরা চিকিৎসা নিতে যান, হোক তা জরুরি বিভাগ কিংবা বহির্বিভাগ, প্রথমেই কাটতে হয় ১০ টাকার টিকিট।

টিকিট কেটে জরুরি বিভাগে প্রবেশের পর প্রথমে রোগীদের যেতে হয় মেডিকেল অফিসারের কক্ষে।
তবে সেই মেডিকেল অফিসারের কক্ষে প্রবেশ করতে গিয়ে পড়তে হয় অস্বস্তিতে।

লোহার খাঁচার মধ্য দিয়েই ভেতরে প্রবেশ করতে হয় রোগীদের। ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, চিকিৎসকদের কক্ষের কাঠের দরজাটি খোলা। তবে কিছুদিন আগে সেখানে থাই কাচের দরজা ছিল।  

এখন শীতকাল বলে এসি বন্ধ করে থাই দরজাটি এখন খুলে ফেলা হয়েছে। যাই হোক, ক্রমানুযায়ী রোগীরা কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান কাচের দেয়াল।

ওপারে বসে আছেন কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসাররা। সেখান থেকেই রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। কাচের দেয়ালের একটু ফাঁকা জায়গা দিয়ে রোগীদের বক্তব্য শুনে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসাররা রোগীকে ওয়ার্ডে পাঠান।

বুধবার রাতে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে অস্বস্তিতে পড়েন রোগী নিয়ে আসা সোলেমান নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে এসেছিলাম অনেক বছর আগে। আবার আজ এলাম।  

তিনি বলেন, আমার স্ত্রী অসুস্থ। তাই জলদি জরুরি বিভাগে এসে টিকিট কেটে মেডিকেলের অফিসারের কক্ষে ঢোকার সময় দেখতে পেলাম, লোহার গ্রিল দিয়ে তৈরি একটি খাঁচা। সেখানে থাকা লোকেরা এর মধ্য দিয়েই ভেতরে যেতে বললেন।

নিজের অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে সোলেমান বলেন, প্রথমে একটু অস্বস্তি বোধ করি। তারপরও কিছু করার নেই। লোহার খাঁচার ভেতর ঢুকে দেখতে পেলাম দরজা খোলা একটি কক্ষ। প্রবেশ করেই আরও অবাক হলাম। কারণ রোগী ও চিকিৎসকের মাঝে টেবিলের ওপরে লম্বা একটি কাঁচের দেয়াল ।  

এই চিত্র ব্যাংকে দেখা যায়। সেখানে দেয়ালের এক পাশে থাকেন গ্রাহকরা, অন্যপাশে কর্মকর্তারা। এমন তুলনা দিয়ে তিনি বলেন, কাচের দেয়ালের ভেতরে বসা চিকিৎসক জানতে চাইলেন, রোগীর কী হয়েছে। সমস্যা শুনে ওয়ার্ডে পাঠালেন।

সোলেমান বলেন, অবাক হলাম এত বড় একটি হাসপাতালে চিকিৎসক থাকেন লোহার খাঁচার ভেতরে। অথচ অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে এমন দৃশ্য চোখে পড়েনি। প্রথমে ঢুকে মনে করেছিলাম হয়তো কোনো ব্যাংকে এসেছি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লক থেকে এক কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালে জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারের কক্ষের সামনে তিন দিক দিয়ে দরজাসহ লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা হয়েছে, শুধুমাত্র চিকিৎসকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে।

তিনি জানান, বিগত সরকারের সময়েও বেশ কয়েকবার রোগীর স্বজনদের মাধ্যমে চিকিৎসকেরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। এ কারণে তৎকালীন পরিচালক চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য লোহার গ্রিল দিয়ে ঘিরে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।  মেডিকেল অফিসারদের ওপর হামলার চেষ্টা হলে দ্রুত চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এমনটি করা হয়।  

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, গত ৫ আগস্টের পরে কয়েক দফায় চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কর্মবিরতির মতো কঠোর আন্দোলনে যান। তখন আন্দোলনরতদের দাবি অনুযায়ী হাসপাতালে সেনা ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয় চিকিৎসকদের নিরাপত্তায়।  

তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। অথচ তাদের ওপরই যদি হামলা হয়, তা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। এখানে আসন বলতে কোন শব্দ নেই, রোগী এলেই ভর্তি করে চিকিৎসক তাদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। চিকিৎসকেরা অনেক কষ্ট করে রোগীদের চিকিৎসা দেন। তাহলে হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দেখা তো কর্তৃপক্ষের কাজ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আগে বলেছিলেন, জরুরি বিভাগে লোহার শেডটি চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য তৈরি করা হয়েছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে যারা রোগীদের সুস্থ করে তোলেন, সেই চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সবার আগে। কারণ অনেকবার চিকিৎসকদের ওপরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটির অনেক জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক নাম প্রকাশ বলেন, বর্তমানে মেডিকেল অফিসারদের কাজ হলো রোগীদের দিকনির্দেশনা দেওয়া। রোগীর বক্তব্য শুনে তাদের নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে পাঠানো।  

সাত থেকে আট বছর আগেও মেডিকেল অফিসাররা রোগী এলেই তারা চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে রোগীকে চেকআপ করতেন। এমনকি তারা রোগীর ব্লাড প্রেসারও মেপে দেখতেন। তারপর রোগীর সঙ্গে কথা বলে সে অনুযায়ী রোগীকে ওয়ার্ডে পাঠাতেন। কিন্তু এখন মেডিকেল অফিসাররা চেয়ার থেকে ওঠেন না। 
BBS cable ad