রিতার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয় গুলিতে

‘রাত প্রায় সাড়ে ১০টায় শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আমার মেয়ের লাশ পাই। সে দেশটাকে ভালোবেসে কোটাসংস্কার করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলো। আমার বুক তো খালি হয়ে গেল। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গত ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি চলাকালে গুলিতে নিহত রিতা আকতারের বাবা মো. আশরাফ আলী।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ৫ আগস্ট কর্মসূচি চলাকালে আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মিরপুর-২ এলাকায় ওভারব্রিজে অবস্থানকালে গুলিবিদ্ধ হয় রিতা। আন্দোলনরত ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় একইদিন বিকেল ৪টায় ১৭ বছর বয়সী রিতা আকতার মারা যান। রাতে বাবা আশরাফ আলী শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মেয়ের লাশ নিয়ে বাসায় ফেরেন। রিতার মাথায় গুলি লেগেছিল।
নিহত রিতার বাবা আশরাফ আলী ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ‘মেয়ের লাশ হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাড়ি আসার জন্য কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্স করে ৬ আগস্ট দুপুরে জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার তালখুর গ্রামে মেয়ের লাশ নিয়ে আসি।’
নিহত রিতার মা রেহেনা বিবি বলেন, ‘৫ আগস্ট সকালে আমরা সবাই যে যার কাজে যাই। এদিকে রিতা কাউকে কিছু না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল। কাজ শেষ করে দুপুরে বাসায় গিয়ে শুনতে পাই ওভারব্রিজে গুলি খেয়েছে রিতা। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কোথায় নিয়ে গেছে আমরা খোঁজ পাচ্ছিলাম না। দুপুর থেকে খুঁজতে খুঁজতে সন্ধ্যার পর একটা মেসেজ আছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ থেকে। পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে গিয়ে মেয়ের রক্তাক্ত নিথর দেহ দেখতে পাই।’
শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের তালখুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাটির দেয়ালের দুটি ঘর। একটি ঘরের টেবিলের ওপর রিতার বইগুলো সাজানো রয়েছে। কথার ফাঁকে রুমের ভেতর বাক্স থেকে রিতার পোশাক বের করে নাড়াচাড়া করেন মা রেহানা বিবি ও বাবা আশরাফ আলী। সেখানে মা-বাবার সঙ্গে থাকতো রিতা। তারা দুই ভাই এক বোন ছিলো। বড় ভাই রাকিব ও ছোট ভাই রোকন। রিতা স্থানীয় ভূগোল হিজবুল্লাহ্ দাখিল মাদরাসা থেকে ২০২৪ সালে দাখিল (এস.এস.সি) পাশ করে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে জয়পুরহাট থেকে ঢাকায় এসে মিরপুরের দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়।
মেয়ের লেখাপড়ার কথা ভেবে কয়েক মাস আগে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন আশরাফ আলী ও রেহানা বিবি। ঢাকার মিরপুর-২ এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন তারা। আশরাফ আলী রিকশা চালাতেন, রেহানা বিবি কাজ করতেন বাসাবাড়িতে। ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু রিতার মৃত্যুতে এলোমেলো করে দিয়েছে পরিবারটিকে।