ডেঙ্গুর রেড জোন মাদারীপুরে ১২০০ ছাড়িয়েছে আক্রান্ত
সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। তবে মাদারীপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো শঙ্কার পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে সরকারি হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হচ্ছে ১৮-২৫ রোগী। চলতি বছর আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ টিম মাদারীপুর পৌরসভাকে ডেঙ্গুর রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সচেতনতা ঘাটতি দেখছে সাস্থ্য বিভাগ। বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানিতে বংশবিস্তার করছে এডিশ মশা, ছড়াচ্ছে রোগবালাই।
তিন বছরের মেয়ে নাফিজা জ্বরে আক্রান্ত। মা লিপি আক্তার তাকে নিয়ে এসেছেন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে। পরীক্ষা করানো হলে ধরা পড়ে ডেঙ্গু। টানা সাতদিনেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জ্বর। একই অবস্থা মোস্তফাপুরের ভদ্রখোলা থেকে আসা ১৪ বছরের মামুন ও ঘোষেরহাটের ব্যবসায়ী বজলুর রহমানের। শরীরে প্রচণ্ড জ্বর। তার সঙ্গে কাঁপুনি, মাথাব্যথা নিয়ে ছুটে আসেন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে। জেলার বাকি তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে নতুন নতুন রোগী।
চলতি বছর জেলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায়ই রয়েছে অর্ধেক। বাসাবাড়ির আঙিনায় জমে থাকা পানি, বদ্ধ ড্রেনে মশার উপদ্রব বেশি হচ্ছে বলে দাবি সিভিল সার্জনের। তবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও ওষুধ ছিটানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে পৌরসভার সচিব খন্দকার আবু আহম্মেদ ফিরোজ ইলিয়াস বলেন, ‘পাঁচ মাস ধরে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এডিস মশা নিধনে নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও ওষুধ ছিটানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়মিতই নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সে হিসেবে এডিস মশা নিধনে এ কার্যক্রম সারা বছরই চলবে।’
চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময় এডিস মশার বিস্তার ঘটে। তবে এবার দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গুর সময়কাল আরো এগিয়ে এসেছে। এখন জুনেই ডেঙ্গু জ্বরের সময় শুরু হয়ে যাচ্ছে। এ বছর ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তন হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে সংক্রমণ। দেরিতে বর্ষা শেষ হওয়ায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো কিছুদিন খারাপ থাকতে পারে।
মাদারীপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি) ডা. মোহাম্মদ ভূঁইয়া আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশির ভাগই স্বাস্থ্য সচেতন নন। নিজেদের মতো করে রোগীরা থাকেন। এমনকি মশারি ব্যবহারেও অনীহা রয়েছে অনেক রোগীর।’
সিভিল সার্জন ও মাদারীপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুনীর আহম্মেদ খান জানান, বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও মাদারীপুরে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। এর অন্যতম কারণ হলো, বাসাবাড়ির আঙিনায় জমে থাকা পানি থেকে এডিস মশার উপদ্রব হচ্ছে। এছাড়া ফুলের টব, গাড়ির অপ্রয়োজনীয় টায়ার, বন্ধ এসি ও অব্যবহৃত বাথরুমের কমোডে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। এর থেকে বাঁচতে নিয়মিত জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। এছাড়া রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে হবে।