শিরোনাম

Space for ads

স্নায়ুতন্ত্রের কর্মব্যবস্থাকে অচল করে দিতে পারে নিউরোপ্যাথিক ব্যথা

 প্রকাশ: ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন   |   রোগ

স্নায়ুতন্ত্রের কর্মব্যবস্থাকে অচল করে দিতে পারে নিউরোপ্যাথিক ব্যথা
Space for ads

জামাল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে পায়ের ব্যথায় ভুগছেন। ব্যথার ধরন ঠিক অন্যান্য ব্যথার মতো নয়। ব্যথার সঙ্গে পা জ্বালাপোড়া করে। পা খুব ভারী আর অবশ অবশ লাগে। পায়ের তলা ঝিনঝিন করে। কোথাও স্পর্শ লাগলে বৈদ্যুতিক শকের মতো ছ্যাঁৎ করে ওঠে। কখনো কখনো ব্যথা দুঃসহ পর্যায়ে চলে যায়। জামাল হোসেনের এ ব্যথা মূলত নিউরোপ্যাথিক ব্যথা। একে নার্ভ বা স্নায়ুর ব্যথাও বলা হয়।

নিউরোপ্যাথিক ব্যথা: আমাদের কথা বলা, হাঁটাচলা অর্থাৎ দৈহিক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড ও পেরিফেরাল নার্ভের মাধ্যমে। স্নায়ুতন্ত্রের মূল অংশ হচ্ছে মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড ও পেরিফেরাল নার্ভ। পেরিফেরাল নার্ভগুলো শরীরের অন্যান্য অঙ্গ, যেমন হাত, পা, পায়ের তলা, আঙুল প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে থাকে। কোনো কারণে এসব নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেহের অঙ্গগুলোতে যথাযথ সংকেত পৌঁছতে পারে না। তখন আক্রান্ত অঙ্গে ব্যথা হয়। এ ব্যথাই নিউরোপ্যাথিক ব্যথা নামে পরিচিত।

কারণ: এ ধরনের ব্যথা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। স্নায়ুতন্ত্রের পুরো কর্মব্যবস্থাকে অচল করে দিতে পারে এ সমস্যা। মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র ও মেরুদণ্ডে যেকোনো সমস্যা হলেই এ ব্যথা হয়। প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে নিউরোপ্যাথিক ব্যথার জন্য ডায়াবেটিসকে দায়ী করা হয়। তবে অন্যান্য অসংখ্য রোগ এ ব্যথার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

সাধারণত যে রোগগুলোর জন্য নিউরোপ্যাথিক ব্যথা হয়—

 ডায়াবেটিস

 ক্যান্সার

 স্ট্রোক

 এইডস

 কুষ্ঠ রোগ

 রক্তনালির জটিলতা

 বাত

 আর্থ্রাইটিস

 থাইরয়েড

এছাড়া অন্যান্য যে কারণ দায়ী

 ক্যান্সারের চিকিৎসা। যেমন কেমোথেরাপির পর নার্ভে সমস্যা হতে পারে।

 দীর্ঘদিন কোনো ওষুধ সেবন করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এ ব্যথা হতে পারে।

 ভিটামিন বি-১ ও বি-১২-এর ঘাটতি থাকলে নিউরোপ্যাথিক ব্যথা হয়।

নিউরোপ্যাথিক ব্যথার লক্ষণ

শুরুতেই বলা হয়েছে, এ ব্যথা অন্য সাধারণ ব্যথার চেয়ে আলাদা। এ ব্যথার সঙ্গে যে লক্ষণগুলো প্রকাশিত হয় তা হলো

 আক্রান্ত স্থানে জ্বালাপোড়া ও কামড়ানো বোধ হওয়া।

 আক্রান্ত অঙ্গ অবশ হয়ে আসা ও ঝিঁঝি ধরা।

 বৈদ্যুতিক শকের মতো বোধ হওয়া।

 কোনো দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই দীর্ঘক্ষণ ধরে ব্যথা।

 ব্যথায় ঘুম না আসা বা ঘুম ভেঙে যাওয়া।

 ত্বকে বিভিন্ন দাগ হওয়া এবং রঙ বদলে যাওয়া।

 আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে ব্যথা বাড়া বা কমা।

নিউরোপ্যাথিক ব্যথার চিকিৎসা

সাধারণত এর চিকিৎসায় অ্যান্টি-এপিলেপ্টিক, অ্যান্টিডিপ্রেশেন্টস-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। গুরুতর ব্যথার ক্ষেত্রে ওপিওডের মতো শক্তিশালী ওষুধ দেয়া হয়। তবে এসব ব্যথানাশক ওষুধ দীর্ঘদিন টানা সেবন করলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তাই কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ সেবন করা যাবে না। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে অনেকের ব্যথা নিরাময় হয়। তবে কার জন্য কোন ধরনের চিকিৎসা লাগবে, তা কেবল চিকিৎসকই ঠিক করতে পারবেন।

জীবনযাপনে চাই নিয়মানুবর্তিতা

সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের মাধ্যমে এ ব্যথাকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এজন্য মেনে চলতে হবে কতিপয় নিয়মকানুন।

 সুষম খাবার নিশ্চিত করুন। নিয়মিত ভিটামিন বি-জাতীয় খাবার খাবেন।

 নিয়মিত শরীরচর্চা করবেন।

 তরলজাতীয় খাবার বেশি করে খাবেন।

 নিয়মিত যোগব্যায়াম করতে পারেন। এটি শরীর ও মনের স্থিরতা আনবে।

 একটানা বসে থাকবেন না বা দাঁড়িয়ে থাকবেন না। অর্থাৎ একই ভঙ্গিতে দীর্ঘক্ষণ থাকবেন না।

 রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখুন।

 পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।

 হতাশামুক্ত থাকুন।

লেখক: অধ্যাপক ডা. সুভাষ কান্তি দে: স্ট্রোক অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজিস্ট

ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

BBS cable ad